হোম আমাদের সম্পর্কে জেলা বিচার বিভাগের ইতিহাস
রংপুর জেলার ইতিহাসঃ
রংপুর জেলা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের এক ঐতিহ্যবাহী জনপদ। সুপ্রাচীনকাল থেকে এই জেলা গৌরবময় ও বৈচিত্র্যপূর্ণ ইতিহাসের অধিকারী। রঙপুর নাম হতে রংপুর নামের উৎপত্তি হয়। এর প্রায় ৮০ শতাংশ তিস্তার প্লাবন ভূমি এবং ২০ শতাংশ বরেন্দ্র ভূমির অন্তর্গত। এই অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, যমুনা, ধরলা প্রভৃতি নদ-নদী। হিন্দু ধর্মশাস্ত্র অনুযায়ী ভারতের পূর্বাংশ কামরূপ বা প্রাগজ্যোতিষ রাজ্যের অস্তিত্ব পাওয়া যায়, যার অন্তর্গত ছিল বর্তমান রংপুর তথা রঙ্গপুর অঞ্চল।
আইন-ই-আকবরীর বিবরণ অনুযায়ী মোঘল রংপুর ৩ ধরনের প্রশাসনিক এলাকা নিয়ে গঠিত ছিল। ১৬৮৭ খ্রিস্টাব্দে ঘোড়াঘাটে মোগলদের একটি ফৌজদারী হেড কোয়ার্টার স্থাপন করা হয়। একই স্থানে কাকিনা, কাজিরহাট, ফতেহপুর মোগলদের অধীনে আসে এবং ২৪ বছর পর ১৭১১ খ্রি. সমগ্র রংপুরে মোগল সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা লাভ করে। অষ্টাদশ শতাব্দীর তিন দশকের শুরুতে মাহিগঞ্জে পর্যন্ত মোগল ইতিহাসের আর তেমন কোন পরিবর্তন ঘটেনি। ১৭৬৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দেওয়ানী লাভের পর রংপুর নতুন ব্যবস্থায় ইংরেজ শাসনাধীন আসে। রংপুর অঞ্চলে সর্বপ্রথম ১৭৬৫ সালে কৃষক বিদ্রোহ দেখা দেয়। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবে বিদ্রোহী সিপাহীরা। এ অঞ্চলে ইংরেজ শাসকদের মাঝে ত্রাসের সঞ্চার করেছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৩০ সালে রংপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে সর্বপ্রথম কংগ্রেসের ডাকে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর এখানে উত্তরবঙ্গের কৃষক নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এবং নভেম্বরে তেভাগা আন্দোলন শুরু হয়।
ভৌগোলিক অবস্থান : রংপুর জেলা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিকভাবে ঐতিহ্যবাহী জনপদ। রংপুর জেলার উত্তরে লালমনিরহাট, পূর্বে কুড়িগ্রাম, দক্ষিণ-পূর্বে গাইবান্ধা, উত্তর-পশ্চিমে নীলফামারী এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে দিনাজপুর জেলা অবস্থিত। তিস্তা নদীর উত্তর ও উত্তর-পূর্ব সীমান্তকে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলা থেকে পৃথক করেছে। রংপুর জেলার মোট আয়তন ২৩৬৭.৮৪ বর্গকিলোমিটার। ৮টি উপজেলা, ৭৬টি ইউনিয়ন, ৩টি পৌরসভা ও ১২১৪টি মৌজা নিয়ে জেলাটি গঠিত।
মুক্তিযুদ্ধ : স্বাধীনতাকামী রংপুরের মানুষ প্রথম যুদ্ধ শুরু করে ৩ মার্চ। মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ রংপুরের শংকু সমজদার। ৩ মার্চ ৩ জনের প্রাণদানের মাধ্যমে শুরু হয় রংপুরের মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধে রংপুরে সকল শ্রেণীর মানুষ অংশগ্রহণ করেন। ৩ মার্চ থেকে ৫ মার্চ রংপুরে কারফিউ চলে। এ অঞ্চলের মানুষ সশস্ত্র যুদ্ধ আরম্ভ করে ২৪ মার্চ। ২৮ মার্চ রোববার রংপুরের মানুষ জেগে উঠেছিল এক নবচেতনায়। এদিন মানুষ লাঠিসোটা নিয়ে ক্যান্টনমেন্টে আক্রমণ চালায়। পাকিস্তানী সৈন্যরা বিক্ষুব্ধ হয়ে সাধারণ জনগণের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। করেছে নির্মমভাবে অত্যাচার। রংপুর অসংখ্য মানুষ প্রাণ দিয়ে সৃষ্টি করে এক অবিস্মরণীয় ইতিহাস।
রংপুর আদালতের ইতিহাসঃ
১৮০৮ সালে রাজা রামমোহন রায় রংপুরের কালেক্টরের দেওয়ান নিযুক্ত হন। ১৮৭৭ সালের পূর্বেই মাহিগঞ্জে রেল লাইন স্থাপিত হয়। ১৮৬১ সালে ইংরেজদের নতুন বিচার ব্যবস্থা কোর্ট কাচারি স্থাপিত হয়। মাহিপুরের জমিদারের মত নবাবগঞ্জের জমিদারেরা তাদের বসতবাড়ির আশেপাশে কাচারি বাড়ি নির্মাণ করেন। উকিল মোক্তারে ভরে উঠে আদালত,গড়ে উঠে নতুন শহর। নামকরণ হয় রঙপুর।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতঃ ১৯০৪ সালে সর্বপ্রথম রংপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রতিষ্ঠা হয়। ব্রিটিশ শাষণ হতে মুক্ত হওয়ার পর রংপুর আদালতের ১ম জেলা ও দায়রা জজ ছিলেন মি. এস এন চক্রবর্তী। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আঃ মমিথ চৌধুরী জেলা ও দায়রা হিসেবে রংপুরে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালে রংপুরের তাজহাট জমিদার বাড়িতে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে হাইকোর্টের একটি স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপিত হয়।
ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টঃ ১ নভেম্বর ২০০৭ খ্রিস্টাব্দ তারিখে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত , রংপুর প্রতিষ্ঠা হয়। প্রায় ২০ হাজার মামলা নিয়ে যাত্রা শুরু করে। প্রথম চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন জনাব মোঃ শফিকুর রহমান। বর্তমানে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত আছে জনাব মোঃ সুরুজ সরকার।
গত ১৫ই জুলাই ২০২১ খ্রিস্টাব্দ তারিখে চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত যাত্রা শুরু করে। প্রথম চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হলেন জনাব এফ, এম, আহসানুল হক যিনি বর্তমানেও কর্মরত আছেন।
আদালতের অবকাঠামোঃ
রংপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সুউচ্চ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বিল্ডিং সহ ৩ টি বিল্ডিং রয়েছে। উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে প্রাচীন ও পুরাতন নথিসহ একটি সুসজ্জিত রেকর্ড রুম রয়েছে।
রংপুর বার এসোসিয়েশনঃ
রংপুর জেলা জজ আদালতে অবস্থিত রংপুর আইনজীবি সমিতি একটি ঐতিহ্যবাহী বার। রংপুর বারের বর্তমান সভাপতি জনাব আঃ মালেক এবং সাধারণ সম্পাদক জনাব আঃ হক প্রামাণিক।